Search This Blog

Followers

Wednesday, August 18, 2021

১৮ ই আগষ্ট মালদায় পালিত হল স্বাধীনতা দিবস।

 ১৮ ই আগষ্ট মালদার স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ আগষ্টের ১৫ তারিখ ভারত স্বাধীন হলেও মালদা জেলা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৮ আগস্ট। এরপর থেকে প্রতিবছরই ১৫ ই আগষ্টের পাশাপাশি ১৮ ই আগষ্ট জাতীয় পতাকা তুলে মালদা জেলায় স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।বুধবার বাবু পাড়া এলাকায় পতাকা উত্তোলন করে এই স্বাধীনতা দিবসটি পালিত হয়। 



     মালদা জেলার  প্রয়াত ইতিহাসবিদ তুষার কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, মালদা জেলা ভারতভুক্তি একটা ইতিহাস। ব্রিটিশরা ঘোষণা করে বাংলা ও পাঞ্জাবের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা গুলি পাকিস্তানের সাথে যোগ করা হবে। আর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গুলি থাকবে ইন্ডিয়ান ডোমিনিয়নে। সেইমতো মালদা জেলা পরে যায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পরে মালদা বাসি। জেলা থেকে শুরু হয় আন্দোলন। ১৪ ই আগষ্ট পাকিস্তান স্বাধীন হয়। মালদা জেলার প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ সুপারের দপ্তরে উত্তোলন করা হয় পাকিস্তানি জাতীয় পতাকা। জেলার দখল নেয় পাকিস্তানি খানসেনা। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে হিন্দুদের মালদহ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইমতো তারা প্রচার শুরু করে। কিন্তু এতে হিতের বিপরীত হয়। মালদহের হিন্দু বাসিন্দাদের পাশে এসে দাঁড়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। হিন্দুদের মালদার ছেড়ে যাওয়া তো দূরের কথা। উল্টে বেশিরভাগ মুসলিম মানুষ পরিষ্কার জানিয়ে দেন তারা কোনমতেই মালদার পাকিস্তান ভুক্তি মেনে নেবে না। তারা ভারতেই থাকবে। হিন্দু-মুসলিম একত্রিত হয়ে শুরু করে পাকিস্তান বিরোধী তীব্র আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দেয় মালদায় ইংলিশ বাজারের জমিদার বর্তমান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী দুই দাদু যদু নন্দন চৌধুরী ও আশুতোষ নারায়ণ চৌধুরী। শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দ্বারকা প্রসাদ বিহানী, স্বাধীনতা সংগ্রামী শান্তি সেন, কৃষ্ণ জীবন সান্যাল, নিকুঞ্জ বিহারী গুপ্ত জনসংঘ নেতা প্রয়াত হরিপ্রসন্ন মিশ্র। মালদহের মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। জেলা জুড়ে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও পাকিস্তানি খান সেনা চাপ সৃষ্টি করে এই আন্দোলন দমাতে পারেনি। আন্দোলনের খবর পৌঁছায় ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলে কাছে। এরপরই ১৮ ই আগস্ট রেডিওতে আবার ঘোষণা করা হয়। তাতে বলা হয় মালদহ জেলার বেশিরভাগ অংশটি থাকবে ভারতে। সেই ঘোষণা মত জেলার পাঁচটি থানা চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুরকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাজশাহী জেলার সাথে যোগ করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাঁপাই নবাবগঞ্জকে পৃথক জেলা হিসেবে ঘোষণা করে। মালদহের বাকি ১০ টি থানা ইংরেজবাজার, মালদা, গাজোল, হবিবপুর, বামন গোলা, চাঁচোল, রতুয়া, মানিকচক, কালিয়াচক ও হরিশ্চন্দ্রপুর এই দশটি থানা এলাকা থেকে যায় ভারত ভূখণ্ডে। পরবর্তী সময়ে কালিয়াচক ভেঙে বৈষ্ণবনগর, রতুয়া ভেঙে পুখুরিয়া, ও মানিকচক ভেঙে ভূতনি। তিনটি আরো নতুন থানা তৈরি করা হয়। ১৮ ই আগস্ট এর ঘোষণার পরপরই মালদা জেলা জুড়ে আনন্দ উৎসবের ঢল নামে। মালদা জেলার মূল ভূখণ্ডের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। জেলা প্রশাসনিক ভবনে ও জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে লক্ষ লক্ষ মালদা বাঁশির উপস্থিতিতে ভারতের তিরঙ্গা পতাকা তোলা হয়।

            সেই ইতিহাসের স্মৃতিকে মাথায় রেখেই মালদা শহরের বাবু পাড়া এলাকা যেখান থেকে প্রথম পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেখানে ১৯৪৭ সাল থেকেই ১৮ ই আগস্ট জাতীয় পতাকা তুলে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।এখনো সেই রীতি প্রচলিত রয়েছে।



No comments:

১৮ ই আগষ্ট মালদায় পালিত হল স্বাধীনতা দিবস।

 ১৮ ই আগষ্ট মালদার স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ আগষ্টের ১৫ তারিখ ভারত স্বাধীন হলেও মালদা জেলা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৮ আগস্ট। এরপর থেকে প্রতিবছরই ১...